আত্মগোপনে চেয়ারম্যান অদৃশ্যভাবে চলছে ইউপি, জনদুর্ভোগ চরমে

অক্টোবর 20, 2025
  • ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে থেকে চালাচ্ছেন পরিষদের কার্যক্রম। ট্রেড লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন সনদ, নাগরিক সেবাসহ পরিষদের কাগজপত্র গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে কোনো রকমে চলছে পরিষদের কার্যক্রম। অন্যদিকে কাগজে-কলমে গ্রাম আদালত পরিচালনা হলেও বাস্তবে পরিষদ থাকে বন্ধ। জনগণের সেবায় পরিষদের চেয়ারম্যানের উপস্থিতি থাকা বাধ্যতামূলক হলেও দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থেকে অদৃশ্যভাবে চালানো হচ্ছে পরিষদ। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। চিত্রটি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়ন পরিষদের।গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিব, ইউপি সদস্য, গ্রাম আদালত পরিচালনার রুম তালাবদ্ধ। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থানকালে পরিষদের রুমগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। এসময় শুধু অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের রুম খোলা পাওয়া যায়।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান যাদু মিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে গেলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম অদৃশ্য স্থান থেকে পরিচালনা করছেন। তিনি এক বছর ধরে পরিষদে আসেন না। তবে পরিষদের কাগজপত্র একজন গ্রাম পুলিশকে দিয়ে তার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে স্বাক্ষর নেয়া হয়।গ্রাম আদালত পরিচালনা নেই বললে চলে। ট্রেড লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধনসহ নাগরিক সেবার কাগজপত্রে জনগণকে বুড়িরহাটে গিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে আসতে হয়। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়াসহ জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে। চেয়ারম্যান মাঝে মধ্যে পরিষদের এলেও পাঁচ থেকে দশ মিনিটের বেশি থাকেন না বলে জানা গেছে। এছাড়া তিনি উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা, আইনশৃঙ্খলা সভাসহ অন্যান্য সভায় রয়েছেন প্রায় ৮ মাস ধরে অনুপস্থিত। তবু তিনি রয়েছেন বহালতবিয়তে।ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকাবাসী একরামুল জানান, চেয়ারম্যান অনেক দিন ধরে অফিসে আসে না। ফলে জনগণের ভোগান্তি বেড়েছে। জনগণ যেখান থেকে সেবা পাওয়ার কথা, সেখান থেকে পাচ্ছে ভোগান্তি। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এসে যখন দেখছেন পরিষদে চেয়ারম্যান নেই, তখন তাদের বুড়িরহাটে চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়।গ্রাম পুলিশ আব্দুল ওহাবকে কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করে বলেন, আমি কাগজপত্র চেয়ারম্যান সাহেবে যেখানে থাকে, সেখানে গিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে আসি। আমাকে সচিব কাগজ দেন, আমি স্বাক্ষর নিয়ে আসি।হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোর্শেদুল হক বলেন, আমরা জনগণকে সেবা দিচ্ছি। প্রথমে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে তিনি তা স্বীকার করেন। অফিসের সব রুমে তালাবদ্ধ, কেউ কি অফিসে আসেন না, জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, সচিব ম্যাডাম কিছুক্ষণ আগে চলে গেছেন। গ্রাম আদালতের সব মামলা মীমাংসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তাই আজ গ্রাম আদালত বসেনি। নাগরিক সনদে স্বাক্ষর নেয়া রয়েছে, জনগণ এলে দেয়া হয়। ট্রেড লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধনসহ অন্যান্য নাগরিক সেবার জন্য চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। চেয়ারম্যান না আসায় ট্রেড লাইসেন্সসহ নাগরিক সেবায় একটু হলেও ভোগান্তি হচ্ছে।ইউপি সচিব আনোয়ারা বেগম জানান, চেয়ারম্যান মাঝে মধ্যে আসেন। জনগণের অতি প্রয়োজন হলে বুড়িরহাটে তার নিজস্ব অফিসে পাঠানো হয়। নাগরিক সেবা দেয়া হচ্ছে। আমি অফিস থেকে কিছুক্ষণ আগে বাড়ি এসেছি।উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, নাগরিক সেবা বঞ্চিত হচ্ছে, ভোগান্তি হচ্ছে এ রকম অভিযোগ আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ দেয়নি। উপজেলা পরিষদের সভায় তিনি প্রতিনিধি পাঠান। ওই চেয়ারম্যানের সাথে এখন পর্যন্ত আমার দেখা হয়েছে বলে মনে পড়ে না। অফিস সময়ে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান-ইউপি সদস্যদের উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। কেন অফিস বন্ধ থাকে, কেন তিনি উপস্থিত থাকছেন না, এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।

টপিক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

আরো দেখুন