ডিসেম্বর 6, 2025

কুষ্টিয়ার মিরপুরে কৃষি বিষয়ক লাইব্রেরি ও সংগঠন ‘কৃষকের বাতিঘর’

নভেম্বর 6, 2025

ডেস্ক নিউজ

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা গ্রামে অবস্থিত কৃষি বিষয়ক লাইব্রেরি ও সংগঠন ‘কৃষকের বাতিঘর’। এই সংগঠনটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও টেকসই কৃষিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণসহ কাজ করে যাচ্ছে এলাকার তরুণ শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে।

সংগঠনটির কার্যক্রমে দেখা যায়, স্বেচ্ছাসেবকরা গ্রামের কৃষকদের কাছে, মাঠে গিয়ে তাদের বই পড়ে শুনিয়ে আসেন। জানান চাষের আধুনিকতা, জীবনমান উন্নয়নের গল্প, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার উপায়, সাহিত্য, ভ্রমণসহ নানাবিধ বিষয়ে। এছাড়া গ্রামীণ নারীদের উন্নয়নেও একই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে এই সংগঠন; যা জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করছে গ্রামের নিরক্ষর চাষি এবং সাধারণ মানুষদের।

এছাড়া বর্তমানে তীব্র তাপদাহ, খরা এবং অতিবৃষ্টি বা স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে কৃষিতে। আলাদা সেচের ফলে যোগ হয়েছে অতিরিক্ত খরচ। এ নিয়ে ফসল চাষ করেও ক্ষতি পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে শঙ্কায় আছেন কৃষকরা। জলবায়ুর এমন পরিবর্তন লক্ষ্য করে কৃষকদের উন্নয়নের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক পরামর্শ ও সেবা দিচ্ছে এই সংগঠন। ফসলের মাঠ ঘুরে কৃষকের বাতিঘরের সদস্যরা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কৃষকদের অবহিত করেন এবং পরামর্শ দেন।

কৃষকের বাতিঘরের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া মিরপুর উপজেলার চরপাড়া গ্রামের কৃষক ছামিদুল ইসলাম বলেন, কৃষকের বাতিঘরের সদস্যরা এসে আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষি আবহাওয়া সম্পর্কে জানিয়েছেন। বই পড়ে শোনান কিভাবে ফসলের ভালো উৎপাদন করা যাবে। এটা আমাদের কৃষকদের জন্য অনেক বড় উপকার। আমরা এখন জমিতে রাসায়নিক সার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়িয়েছি। আর জমিতে পার্চিং করা সহ ক্ষেতের আইলে বিভিন্ন বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে এখন ফসলের মাঠ দেখতেও আরও সুন্দর লাগে।

এদিকে এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে কাজ করছে এই সংগঠনটি। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের বইয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, নেতৃত্ব শেখানো এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী কর্মী এবং সদস্যদের। কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যই এই দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।

এ বিষয়ে সংগঠনের সদস্য সাদিয়া খাতুন বলেন, আমরা যখন কৃষকদের বই পড়ে শোনায়, তার আগে নিজেরা সেই বইটি ভালো করে পড়ি; তা না হলে তো আমরা সেটি পড়ে কৃষকদের বোঝাতে পারবো না। এদিক থেকে আমাদের উন্নয়নটা অনেক বেশি। আমরা পাঠ্যক্রমের বাইরেও অনেক বিষয়ে জানতে পারছি। আর সব থেকে বড় ব্যাপার হলো এগুলো আমরা শুধু পড়িই না, বরং তা আত্মস্থ করি। কেননা সেগুলো আমাদের আবার কৃষককে বোঝাতে হয়। অনেক সময় একটা বই পড়ার পরেই আমরা তা ভুলে যায়, কিন্তু এভাবে চর্চার ফলে আমরা সহজে ভুলি না। ফলে বিভিন্ন বিষয় খুব ভালোভাবে জানার মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের অন্যদের তুলনায় আরও দক্ষ করে তুলতে পারছি। এছাড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে আমাদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।

কৃষকের বাতিঘরের স্বেচ্ছাসেবী মো. শোয়েব মল্লিক বলেন, আমি আগে কম্পিউটার চালাতে পারতাম না। এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর আমি কৃষকের বাতিঘরের সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর এখানে থেকে আমাকে ৬ মাসের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমি এখন কম্পিউটারে দক্ষ। এখন নিজে একটা কম্পিউটার কিনে সংগঠনের কাজেও সহায়তা করি, অন্যদেরও কম্পিউটার শিখতে সাহায্য করি।

কৃষকের বাতিঘর সংগঠনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলির মধ্যে রয়েছে- কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ইংরেজি ভাষা প্রশিক্ষণ, নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থানমূলক দক্ষতা প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা কৃষি, ব্যবসা, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও পেয়েছে কর্মসংস্থান।

সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ে মিরপুর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. জামশেদ আলী বলেন, কৃষকের বাতিঘর সংগঠন আমাদের উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও টেকশই কৃষিতে উদ্বুদ্ধের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। এই উদ্যোগটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকের বাতিঘর সংগঠন এই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সংগঠনটি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে তরুণ শিক্ষার্থীদের জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই কৃষি সম্পর্কে সচেতন করছে। এছাড়াও সংগঠনটি এলাকার শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে। আমি আশা করি, কৃষকের বাতিঘর সংগঠনের এই উদ্যোগ আমাদের উপজেলায় ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

সার্বিক বিষয়ে কৃষকের বাতিঘরের উদ্যোক্তা হোসাইন মোহাম্মদ সাগর বলেন, কৃষকের বাতিঘরের কার্যক্রম কৃষকদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি কৃষকদের ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কৃষকদের প্রযুক্তি সহায়তা দিচ্ছে। একইসঙ্গে গ্রামে বসবাসকারী তরুণ শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনটি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা, নেতৃত্ব, এবং কর্মসংস্থানমূলক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। কৃষকের বাতিঘর সংগঠনের উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী তরুণদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। সংগঠনটি বিশ্বাস করে যে দক্ষ মানবসম্পদের মাধ্যমেই বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকার উন্নয়ন সম্ভব। সূত্রঃ দৈনিক আমাদেরসময়

বিডিটাইমস/এআর/এনই/

টপিক :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

আরো দেখুন