ডেস্ক নিউজঃ
নড়াইল শহরের হাতির বাগান মোড় থেকে বৌবাজার, মুচিপোল, রূপগঞ্জ, বাঁধাঘাট, দিবদারতলা, পুরাতন বাস টার্মিনাল, কোর্টচত্বরসহ নড়াইল পুরাতন বাজারের শত শত পত্রিকার পাঠক ও গ্রাহকের কাছে পরিচিত নাম হকার স্বপন কুন্ডু।
কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত শীত-গরম, রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দীর্ঘ ৩১ বছরেরও বেশি সময় ধরে গ্রাহকের দ্বারে দ্বারে পত্রিকা পৌঁছে দেন হকার স্বপন কুন্ডু। পত্রিকা বিক্রি করেই চলছে তার জীবিকা।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত তার সঙ্গে ঘুরে দেখা গেল নড়াইলের এই দীর্ঘদিনের পত্রিকা বাহকের প্রতিদিনের জীবন। তার বাড়ি সদর উপজেলার হাটবাড়িয়া গ্রামে। সেখান থেকে প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে নড়াইল শহরে এসে তিন দশক ধরে তিনি এই পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন। সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে আর বৃদ্ধ শাশুড়ি সকলেই তাঁর উপার্জনে চলে। বড় ছেলে মাস্টার্সে পড়েন, মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে।নড়াইলে কর্মরত সাংবাদিক আবু তাহের মোল্যা বলেন, ‘ত্রিশ বছর ধরে স্বপনদা যে পরিশ্রম করছেন, তার সঙ্গে সততা ও দায়বদ্ধতাও জড়িত। আজকের দিনে তাঁর মতো মানুষ সমাজে বিরল।’গ্রাহক জাহাঙ্গীর মিনা বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সকালে স্বপনদার কাছ থেকে পত্রিকা নেওয়ার জন্য বাজারে এসে অপেক্ষা করি। কখন স্বপনদা আসবে আর কখন পত্রিকা পাব। আমি বয়স্ক মানুষ, মোবাইলে সংবাদ পড়তে পারি না। পত্রিকা পড়েই দেশ-বিদেশের খোঁজখবর জানি।’আরেক গ্রাহক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘স্বপনদা ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে নিয়মিত সময়মতো আমাদের পত্রিকা পৌঁছে দেন। হকার স্বপনদার আচার-আচরণ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।’ব্যবসায়ী মশিউর রহমান বলেন, ‘তিনি ৩১ বছর ধরে পত্রিকা পড়েন। স্বপন কুন্ডু তাঁকে নিয়মিত পত্রিকা দেন। তিনি ভালো মানুষ। আমি তাঁর জন্য দোয়া করি, সে যাতে ভালো থাকে।’হকার স্বপন কুন্ডু জানান, বিয়ে করার পরপরই চোখে মুখে নেমে আসে অন্ধকার। কোনো কুল-কিনারা না পেয়ে সংসারের হাল ধরতে তিনি পত্রিকা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৪ সালে আঞ্চলিক একটি পত্রিকার ব্যবস্থাপক বাদলের পরামর্শ ও সহযোগিতায় শুরু হয় পত্রিকা বিক্রি। তখন থেকে স্বপন কুন্ডু হয়ে যান হকার স্বপন।স্বপন কুন্ডু আরও জানান, একসময় দ্রব্যের মূল্য কম ছিল। পত্রিকা বিক্রি করে যা আয় হতো, তা দিয়ে মোটামুটি সংসার চলে যেত। বর্তমানে ইন্টারনেটে সব পাওয়া যাওয়ায়, দিনদিন কাগজের পাঠক কমে যাওয়ার আক্ষেপও আছে তাঁর কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘১৫ কপি ‘লোকসমাজ’ দিয়ে শুরু করছিলাম। একসময় ৪০০ কপি চালাতাম। পরে ‘লোকসমাজ’ কমলেও অন্য পত্রিকা বাড়ে। এখন নেটের যুগ আসায় পত্রিকার চাহিদা কমছে। তরুণেরা কাগজ পড়ে না। বয়স্করাই বেশি নেয়। এখন স্থানীয়-জাতীয় মিলিয়ে আড়াইশো কপি চালাই।’স্বপন বলেন, ‘একসময় ১৪-১৫ হাজার টাকা আয় হতো। তখন দ্রব্যমূল্যের চাপ কম ছিল, সংসার চালিয়েও কিছু সঞ্চয় হতো। এখন পত্রিকার চাহিদা কমায় আয়ও কমে গেছে। ১০-১২ হাজার টাকা পাই, তাও কষ্টে ধরে রাখা যায়। এই পেশায় নতুন কেউ আসে না। কিন্তু আমার এই কাজের প্রতি ভালোবাসা ছাড়তেও পারি না।’নড়াইল প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি, সিনিয়র সাংবাদিক এডভোকেট মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘স্বপন শুধু পত্রিকা বিক্রেতা নন, তিনি আমাদের একজন সহযোদ্ধা। সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তিনি হৃদয়ের টানে হাসিমুখে পালন করেন।
এম কে