বিডি নিউজ ডেস্কঃ
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা সংবাদ
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বৈরবাড়ী, চাপাপাড়া ও হিরামণি মৌজাজুড়ে শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী ও দেড়শ বছরের পুরোনো ঢেমঢেমিয়া কালিমেলা। বাংলা কার্তিক মাসের শ্যামাপূজার অমাবস্যা উপলক্ষে আয়োজন করা এই মেলা। শুধু পূজাকেন্দ্রিক নয়, এটি আজ গ্রামীণ সমাজ, লোকজ সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের মহামিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। সাত দিনের পূজার আনুষ্ঠানিকতার পরও মেলার রেশ থাকে পুরো মাসজুড়ে।
মেলায় সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ঘোড়ার হাট। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও রংপুর থেকে আগত বিক্রেতারা এনেছেন তাজি, ভুটানি, মনিপুরী, পঙ্খীরাজ ও রাজা বাহাদুরসহ বিরল জাতের ঘোড়া।
চিরিরবন্দর থেকে আসা বিক্রেতা ইউসুফ আলী জানান, তিনি চারটি ঘোড়া মেলায় নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে একটি তাজি জাতের ঘোড়ার দাম চেয়েছেন ৩ লাখ টাকা, তবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রস্তাব পাওয়া গেছে।ঘোড়ার পাশাপাশি মহিষের হাটেও চলছে পাল্টাপাল্টি দর-কষাকষি। সারি সারি পাড়া মহিষ, গয়াল ও দেশি জাতের মহিষ নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন বিক্রেতারা। আকার ও ওজনভেদে প্রতি জোড়া মহিষের দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরের আলম হোসেন বলেন, তিনি তিন জোড়া পাড়া জাতের মহিষ এনেছিলেন, যার মধ্যে দুই জোড়া তিনি বিক্রি করেছেন।এক জোড়া ৫ লাখ ৫০ হাজার ও আরেক জোড়া ৫ লাখ টাকা।
মেলা প্রাঙ্গণে শুধু পশু বেচাকেনা নয়, রয়েছে গ্রামীণ উৎসবের পুরো আবহ। শিশুদের খেলনা, মিঠাই-মিষ্টি, নাগরদোলা, গৃহস্থালির সামগ্রী, হস্তশল্প ও লোকজ পণ্যের অসংখ্য দোকানে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। পুরোনো দিনের মেলার রঙ, তাল আর উচ্ছ্বাস এখনো অক্ষুণ্ন রেখেছে ঢেমঢেমিয়া কালিমেলা।
মেলার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আহমেদ বলেন, মেলা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা রক্ষায় স্থানীয় মেলা কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ ঐতিহ্য, সামাজিক সম্প্রীতি ও লোকসংস্কৃতির অমূল্য নিদর্শন হিসেবে ঢেমঢেমিয়া কালিমেলা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে শুধু একটি মেলা নয়, বরং গ্রামবাংলার মানুষের মিলনমেলা ও স্মৃতির উৎসব হয়ে আছে।