বিডি নিউজ ডেস্ক:
মাহিদা বেগম (৪০)। স্বামী মৃত আবু বকর হাওলাদার । ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত এক মাস আগে মারা গেছেন আবুবকর। স্বামীকে হারিয়ে এখন তিন সন্তান নিয়ে অভাবে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। তবে সন্তানদের স্বপ্ন বাঁচাতে ও সংসারের অভাব দূর করতে ভাড়ায় নেওয়া একটি চায়ের দোকানই একমাত্র সম্বল। সন্তানের স্বপ্ন বুনছেন চায়ের কাপে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের শিমুল তলা এলাকার মো.আবু বকর হাওলাদারের সঙ্গে বরিশালের ইব্রাহিম হাওলাদের মেয়ে মাহিদা বেগমের বিয়ে হয় প্রায় ২৪ বছর আগে। তাদের ঘরে ২ মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে আফসান আক্তার মিম মাদারীপুর সরকারী কলেজে অর্নাসের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে মোসা. আফরিন কুলপদ্বী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। ছেলে আরিয়ান আহম্মেদ মাহিমের বয়স আড়াই বছর।
সংসারের অভাব দূর করতে স্বামী-স্ত্রী মিলে ৯ বছর আগে বাড়ির কাছেই শিমুল তলা বাজার এলাকায় একটি চায়ের দোকান দেন। ভালোই চলছিলো দোকান। হঠাৎ পাঁচ বছর আগে আবু বকর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানতে পারেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। শেষের দুই বছর বেশি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে যান তিনি। এরপর তার চিকিৎসার জন্য ঋণ করে ও অন্যের সহযোগিতায় কোনভাবে চলছিলো দিন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর মারা যান আবু বকর হাওলাদার। এরপর একাই সংসার আর দোকানের হাল ধরেছেন মাহিদা বেগম।
ভাড়া নেয়া দোকানে চা বিক্রির পাশাপাশি পান ও সামন্য কিছু বিস্কুট বিক্রি করেন তিনি। দোকানটি বেশ বড় হলেও সেলসগুলো ফাকা পড়ে আছে। টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় মালামাল তুলতে পারেন না তিনি। শুধু চা বিক্রির টাকায় দুই মেয়ের পড়াশুনাসহ সংসারের সব খরচ জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তার। তাছাড়া প্রায় তিন লাখ টাকার মতো দেনা থাকায় মাহিদা বেগম এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
মাহিদা বেগমের মেয়ে আফরিন বলেন, আমার আর আমার বোনের পড়াশুনার খরচ জোগাড় করতে মায়ের খুব কষ্ট হয়। এই চায়ের দোকান থেকেই যা আয় হয়, তা দিয়ে আমাদের সংসারের পুরো খরচ জোগাড় করতে হয়। বাবা দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তার চিকিৎসার জন্য অনেক দেনা করতে হয়েছে।
মাহিদা বেগম বলেন, এই চায়ের দোকান দিয়েই আমার সব খরচ জোগাড় করতে হয়। প্রতিদিন এক হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। খরচ বাদ দিয়ে অল্প কিছু আয় থাকে। তা দিয়েই পুরো সংসার চালাতে হয়। দুই মেয়ের পড়াশুনার খরচ জোগাড় করতে হয়। ছেলে ছোট। আমাকে সহযোগিতা করার মতো কেউ নেই। যদি কেউ আমার দোকানের বিক্রির জন্য কিছু মালামাল কিনে দেয় তাহলে আমি তা বিক্রি করে একটু আয় করতে পারতাম। এতে আমার অনেক উপকার হতো। আমার দুই মেয়ের পড়াশুনাটা ঠিকমতো চালাতে পারতাম।
মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নাজনীন আফরোজ বলেন, মাহিদা বেগম চাইলে ঋণ নিতে পারবেন। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন ধরণের ট্রেনিং হয়। ট্রেনিং নিয়েও তিনি কাজ করে আয় করতে পারবেন। কয়েকদিন আগেই ইউনিয়নগুলোতে ভিজিডি’র কার্ড দেয়া হয়ে। এরপর দিলে তিনি চাইলে তাকেও দেয়া হবে।