ডিসেম্বর 14, 2025

রাজশাহীতে অসময়ের বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি

ডিসেম্বর 13, 2025

‘বাজারে মুলা তোলার আগেই সব শেষ হইয়া গেল—এই যে জমি, এখন শুধু পানি আর পানি।’ গতকাল শুক্রবার সকালে জমির সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামের কৃষক রাব্বানী মন্ডল। রাব্বানীর চোখের কোণে পানি, পায়ের নিচেও হাঁটুসমান পানি। একসময় যে জমি ভরে উঠেছিল মুলার গাছে, এখন সে জমি ডুবে রয়েছে বৃষ্টির পানিতে।

নভেম্বরের শুরুতেই অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে এখনো এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, বাগমারা, তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার ফসলের মাঠজুড়ে। টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে জেলার হাজারো কৃষক এখন বড় ক্ষতির মুখে। শাক থেকে শুরু করে ঢ্যাঁড়স, মুলা, পেঁয়াজ; এমনকি আমন ধান—সব ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ৪ হাজার ২০০ জন। দুই দিনের বৃষ্টিতে জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কৃষকেরা বলছেন, ১৯৮৬ সালের পর এই সময়ে এমন বৃষ্টি আর কখনো দেখেননি তাঁরা। গতকাল সকালে পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষক রাব্বানী মন্ডলের সঙ্গে। মুখে বিষণ্ণতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি এবার হইছে। এখনো পানি নামেনি। ৫ বিঘা জমি পানির নিচে। চারপাশে পুকুর, পানি নামারও পথ নাই।’

রাব্বানী আরও বলেন, ‘সরকার যদি পাশে থাকে, তাহলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব। তা না হলে কঠিন হবে।’

পবা উপজেলার শিয়ালবেড়, পাইকপাড়া, দাদপুর ও মুরারীপুর গ্রামের মাঠজুড়ে একই চিত্র। যেদিকে চোখ যায়, এখনো চোখে পড়ে কেবল পানি। কোথাও ধান হেলে পড়েছে, কোথাও শাকসবজি ডুবে রয়েছে পানির নিচে। পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘১২ কাঠা জমিতে শাকসবজি করেছিলাম, বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। এমন সময় তো বৃষ্টি হয় না।’

একই এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক ১ বিঘা জমিতে বি৮৭ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। ধান কাটার আগেই নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে জমিতে পানি উঠেছে, বাতাসে ধানের গাছ হেলে পড়েছে। মাঠে দেখা গেল, কৃষকেরা কাদামাটি মাড়িয়ে হেলে পড়া ধান কেটে নিচ্ছেন। সেখানে তাঁর ছেলে সোহানুর রহমান বলেন, ‘অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে যাবে। শ্রমিক খরচও বেশি হবে। মনে হচ্ছে খরচের টাকাও উঠবে না। তিন দিন পর বৃষ্টি হইলে এই সর্বনাশ হতো না।’

পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এম এ মান্নান বলেন, নভেম্বরের শুরুতেই যে বৃষ্টি হয়েছে, সেটি মূলত নিম্নচাপের কারণে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনা মূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যেন জমি শুকিয়ে দ্রুত নতুন ফসল লাগাতে পারেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, বৃষ্টিতে জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তথ্য ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রণোদনা এলে তা বিতরণ করা হবে।

বি/এ

টপিক :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

আরো দেখুন