ডিসেম্বর 6, 2025

সোনালি আমনে ভরে গেছে সন্দ্বীপের ডুবোচর

নভেম্বর 23, 2025

ডেস্ক নিউজ:

১০ কিলোমিটার দীর্ঘ আর ৩ কিলোমিটার চওড়া চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম উপকূলের নতুন চরটির নাম ডুবোচর। স্থানীয় মানুষেরা একে ডোবাচর বা ডুবাগা বলে। ডুবাগা শব্দের অর্থ—যে চর প্রবল জোয়ারে ডুবে যায়। চরটিতে এর আগে মাছ চাষের জন্যই কৃষকেরা ধানের আবাদ করতেন। এবার প্রথমবারের মতো ধানের ফলন কৃষকের প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে গেছে। মাছের পাশাপাশি ধান থেকেও ভালো আয়ের আশা করছেন তাঁরা।

ডুবোচর ঘুরে দেখা গেছে, সোনালি রঙের পাকা ধানের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছ। মাঠে কৃষকেরা ব্যস্ত ধান কাটতে। কেউ মাঠ থেকে ধান তুলে এনে স্তূপ সাজাচ্ছেন। কেউ কেউ ট্রাক্টরে ধান বোঝাইয়ে ব্যস্ত। কৃষকদের মতে, চরের প্রায় ৫০০ কানি (১৬০ শতকে ১ কানি) আবাদি জমিতে এ বছর ধান উঠবে অন্তত ৩০ হাজার মণ বা ১ হাজার ২০০ টন। কৃষকেরা যেটিকে বাম্পার ফলন বলে উল্লেখ করেছেন।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, ডোবাচরে এ বছরই প্রথম এত বেশি পরিমাণে চাষ হলো। গত মৌসুমে পরীক্ষামূলক চাষে বাজিমাত হয়েছে বলেই এবার চাষ বেড়েছে বহুগুণে। আগামী মৌসুমগুলোতে চাষ উত্তরোত্তর বাড়বে বলেই তাঁদের ধারণা। আমনের বাম্পার ফলন হলেও কৃষি বিভাগের কোনো মাঠ

কর্মকর্তার দেখা পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে কৃষকের। সন্দ্বীপের কৃষি কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, ডুবোচরে তাঁর যাওয়া হয়নি, তবে সেখানকার আমনের ফলন সম্পর্কে তিনি জানেন।

বাড়ছে ধানের চাষ

কৃষকেরা জানিয়েছেন, গত মৌসুমে তাঁরা ধানের ফলন যাচাই করেছেন। জোয়ারের নোনাজলে ডুবে যায় বলে তাঁরা আমনের শতবর্ষী জাত ‘রাজাশাইল’ আবাদ করেছিলেন। খুব ভালো ফলন হওয়ায় এবার চাষ হয়েছে অন্তত ৫০০ কানি জমিতে, যা গতবারের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। চরের মধ্যভাগে নিজের জমিতে ধান কাটছিলেন মো. নুরুল ইসলাম (৫৫)। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই চরের চাষ এক হাজার কানি ছাড়িয়ে যাবে।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, গত মৌসুমে তাঁরা ধানের ফলন যাচাই করেছেন। জোয়ারের নোনাজলে ডুবে যায় বলে তাঁরা আমনের শতবর্ষী জাত ‘রাজাশাইল’ আবাদ করেছিলেন। খুব ভালো ফলন হওয়ায় এবার চাষ হয়েছে অন্তত ৫০০ কানি জমিতে, যা গতবারের চেয়ে ১০ গুণ বেশি।

জমিতে বিছিয়ে রাখা ধানের ছড়া স্তূপ করছিলেন মো. নুর উদ্দিন (৫০)। নুর উদ্দিন এ বছর ১২ কানি জমিতে চাষ করে ভালো লাভের আশা করছেন। ভবিষ্যতে তিনি ২০ কানি জমিতে আমন লাগানোর স্বপ্ন দেখছেন। নুর উদ্দিন, নুরুল ইসলামদের মতো প্রায় সব চাষির আশা, তাঁরা ভবিষ্যতে আরও বেশি আমনের চাষ করবেন।

ধানে আর মাছে সাফল্য

ডুবোচরে গিয়ে দেখা গেল, মাঠজুড়ে সোনালি ধান নিয়ে কৃষকের তৎপরতা। তবে কেবল ধান নিয়েই এখানে কৃষকের কারবার থেমে নেই। ধানের জমিতে মাছও চাষ করছেন। অনেক কৃষক মাছ চাষ করবেন বলে ধান লাগিয়েছিলেন। দুটিতেই এসেছে সাফল্য।

তালিম হোসেন পূর্বপুরুষের জমিতে ফিরে চাষ শুরু করেছেন। ১২ কানি জমিতে ধান চাষ করেছেন তিনি। একই জমিতে মাছও ছেড়েছিলেন। এবার তিনি মাছ বিক্রি করেছেন প্রায় ২২ লাখ টাকার মতো। ভবিষ্যতে চাষ আরও বাড়াবেন। মাছের বিক্রিও বাড়বে বলে আশা তাঁর।

ডুবোচরে ফলন বেশি

জোয়ারের সঙ্গে ডুবোচরে পলি জমা হয় প্রতিবছর। আর এ কারণেই এখানকার জমি উর্বর। পাশের সবুজচর ও স্বর্ণদ্বীপের জমিতে এখন আর নতুন পলি জমে না। যত দিন পলি জমার সুযোগ পাবে, তত দিন উর্বরতা থাকবে অক্ষুণ্ন। ধানের ফলন যেমনি বেশি হবে, তেমনি মাছের আনাগোনাও থাকবে বেশি। এমন তথ্যই দিয়েছেন কৃষকেরা। তালিম হোসেন স্নাতক শেষ করে এখানে চাষে নেমে উপার্জন করছেন লাখ লাখ টাকা। তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, পলি জমতে পারে বলেই বাম্পার ফলন হচ্ছে আমনের। ক্রমে চর উঁচু হয়ে জোয়ারে ডুবে যাওয়া বন্ধ হবে। তখন মাছ আহরণ আর ধানের ফলনে ভাটা পড়বে।

বি / এ

টপিক :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

আরো দেখুন