ডিসেম্বর 6, 2025

বারান্দায় মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী সবুজ

নভেম্বর 4, 2025

ডেস্ক নিউজ:

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার পানবাড়িয়া গ্রামের যুবক সবুজ শিকদার (৩৪)। জীবিকার খোঁজে ১৭ বছর গ্রামের বাইরে ছিলেন। গত বছর নিজ গ্রামে ফেরেন তিনি। মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে নিজ ঘরের বারান্দায় শুরু করেন মাশরুম চাষ। এখন সেই মাশরুমই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি।

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বাধাল ইউনিয়নের পানবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ইছহাক আলী শিকদারের ছেলে সবুজ শিকদার। ২০০৭ সালে জীবিকার খোঁজে বাড়ি ছেড়েছিলেন। দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে কাটিয়েছেন।

এক সময় ওষুধের ব্যবসা করলেও, গত বছর তিনি নতুন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন। সবুজ সাভারের মাশরুম ইনস্টিটিউট থেকে ১২ দিনের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মাশরুম চাষ শুরু করেন। নিজের ঘরের বারান্দার মাত্র ১২ হাত জায়গায় তিনি ‘মেসার্স সাইবা পিও-টি জাতের মাশরুম’ প্রকল্প চালু করেন। বর্তমানে তিনি একসঙ্গে ৬২২টি মাশরুম ব্যাগে চাষ করছেন এবং প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন কেজি মাশরুম উৎপাদন করতে সক্ষম।

সবুজ স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি মাশরুম ৪০০ টাকায় বিক্রি করেন, আর মাশরুম গুঁড়া বিক্রি করেন প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকা দরে। তিনি দারাজ, পাঠাও, স্কুট এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাশরুম সরবরাহ করছেন। এছাড়াও ৫০০ গ্রাম ইস্পন প্যাক ২৫ টাকায়, ১ কেজি ৫০ টাকায় এবং ২ কেজির প্যাকেট ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

পানবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, সবুজ ভাই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। আগে কেউ ভাবেনি যে ঘরের বারান্দায় বসেই এত কিছু করা যায়। এখন গ্রামের অনেক যুবকই মাশরুম চাষে আগ্রহী হচ্ছে।

স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা শিরিন বেগম বলেন, মাশরুম চাষ করে সবুজ এখন ভালো আয় করছেন। এমন উদ্যোগে যদি সরকারি প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পাওয়া যায়, তাহলে আরও অনেকেই এগিয়ে আসবেন এবং স্বাবলম্বী হবে।

সবুজ শিকদার বলেন, প্রথমে মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন প্রতি মাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। যদি সরকারি সহযোগিতা পাই, তাহলে আরও বড় আকারে চাষ করতে পারব। আমার স্বপ্ন অনেক বড়। এই বারান্দার ছোট পরিসর থেকে শুরু করে একদিন আমি এই মাশরুম চাষকে অনেক বড় একটি শিল্পে পরিণত করতে চাই।

তিনি বলেন, আমি চাই আমার মতো আরও অনেক বেকার যুবক এই মাশরুম চাষে আগ্রহী হোক এবং স্বাবলম্বী হোক। সরকারি সহযোগিতা পেলে এই চাষকে আমি দেশের প্রতিটি ঘরে ছড়িয়ে দিতে চাই।

কচুয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শেখ নাইমুর রশিদ লিখন বলেন, মাশরুম চাষ এখন একটি লাভজনক কৃষি উদ্যোগ। খুব অল্প জায়গায়, অল্প খরচে এটি চাষ করা যায়। সবুজ যা করছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা চাই আরও যুবক তার মতো উদ্যোগ গ্রহণ করুক। কৃষি অফিস থেকে আমরা সব সময় তাদের পাশে আছি।  মাশরুম পুষ্টিকর হওয়ায় বাজারে এর

চাহিদাও হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে। সবুজের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অন্যদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, সবুজের মতো কেউ যদি এই উদ্যোগ শুরু করতে চায়,  তাহলে  প্রশিক্ষণ, পরামর্শ বা যে কোনো সহযোগিতায় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

আরো দেখুন