ডিসেম্বর 6, 2025

স্থান :

/

/

চলনবিলের শুটকি যাচ্ছে দেশ-বিদেশে, ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা

নভেম্বর 5, 2025

বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৎস্যভাণ্ডারখ্যাত চলনবিল এলাকার তাড়াশ ও উল্লাপাড়ায় শুটকি তৈরির ধুম পড়ে গেছে। শুটকি উৎপাদনের লক্ষ্যে এ অঞ্চলের তিন শতাধিক চাতালে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতি বছরের মতো এবারও শুরু হয়েছে দেশীয় প্রজাতির মাছ দিয়ে শুটকি তৈরির প্রক্রিয়া। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে প্রায় ২৭৫.৮০ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

শুটকি ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, প্রতিমণ কাঁচা মাছ ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় কেনা হয়। তাড়াশের ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ৩ কেজি কাঁচা মাছ থেকে প্রায় ১ কেজি শুটকি তৈরি হয়। উৎপাদিত শুটকি মাছ প্রকারভেদে ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা মণ দরে পাইকারি বিক্রি করা হয়।

ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমে চলনবিলে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। সকাল বা বিকেলে স্থানীয় আড়ত থেকে এসব মাছ কিনে এনে চাতালে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করা হয়। চলতি বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে শুটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে। এ অঞ্চলের প্রতিটি চাতালে ১০ থেকে ১৫ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন, যার মধ্যে নারীরাই বেশি দক্ষ বলে জানা গেছে।

চলনবিলে শুটকি তৈরির কাজ শুরু হলেও বাজারজাত হতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে। শুকনো মৌসুমে এসব শুটকি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়। স্থানীয় পাইকাররা জানান, এখানকার উৎপাদিত শুটকির বেশিরভাগই সৈয়দপুর আড়তে যায়।

তাড়াশ এলাকার শুটকি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ও মোফাজ্জল হোসেন জানান, এবার শুটকি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চলনবিলে যত্রতত্র পুকুর খনন এবং বন্যা কম হওয়ায় পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তারা বলেন, গত বছর ৩০ থেকে ৩২ মেট্রিক টন শুটকি তৈরি হলেও এবার ১০ থেকে ১২ মেট্রিক টনের বেশি উৎপাদন সম্ভব নয়।

চাতালের নারী শ্রমিকদের অভিযোগ, তারা চরম মজুরি বৈষম্যের শিকার। একজন নারী শ্রমিক দিনে ২৫০ টাকা পান, যেখানে পুরুষ শ্রমিকদের মজুরি ৫০০ টাকা এবং তিন বেলা খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু নারী শ্রমিকদের কোনো খাবার দেওয়া হয় না।

উল্লাপাড়া উপজেলার বড়পাঙ্গাসীর হাছেন আলী বলেন, বর্ষাকালে মাছের আমদানি বেশি হয়। এলাকার হাট-বাজার থেকে মাছ কিনে এনে তারা শুটকি তৈরি করেন। এখানকার শুটকি মাছ সৈয়দপুর, জয়পুরহাট, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন মোকাম বাজারে পাইকারি বিক্রি হয়।

চাতালের নারী শ্রমিক হাফিজা ও শাহিনুর জানান, সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য তারা মাছ বাছাইয়ের কাজ করেন। দিনে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরি পান।

তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোকারম হোসেন বলেন, ইতিমধ্যেই শুটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে এ বছর মাছের সরবরাহ আগের তুলনায় কিছুটা কম। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে ৭০ থেকে ৮০ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।

উল্লাপাড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান জানান, বর্তমানে এখানে ৩০–৩৫টি চাতালে শুটকি উৎপাদন চলছে। প্রতিবছর এ উপজেলায় প্রায় ৮০ থেকে ১০০ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদিত হয়। এখানকার শুটকির চাহিদা দেশের বিভিন্ন মোকাম বাজারে রয়েছে। উৎপাদিত শুটকি ঢাকা ও নীলফামারীতেও পাঠানো হয়।

সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান জানান, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত শুটকি উৎপাদনের জন্য ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং নিয়মিত মনিটরিং চলছে। সিরাজগঞ্জের শুটকির চাহিদা শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও রয়েছে। এখানকার শুটকি নীলফামারী আড়ত হয়ে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।

টপিক :

স্থান :

/

/

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

আরো দেখুন